লিথিন ও পুরাতন কাপড় দিয়ে তৈরি করা ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করেন রানু বেগম। শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভূমখাড়া ইউনিয়নের পূর্বনলতা গ্রামের মালদ্বীপ রাস্তার মাথায় তার বসবাস।
একটু সহজ-সরল হওয়ার কারণে স্বামী হাকিম খান তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। দুই ছেলেও তার কোনো খোঁজ নেয় না। তাই বাবার বাড়ির এলাকায় ইরির ধানের ব্লকের পাশে রাস্তার ওপর একটি চুলা বানিয়ে রান্না করে খায়। চুলার পাশেই কলাগাছের নিচে একটি ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে সেখানেই রাত কাটান রানু বেগম।
পিতা হাকিম ছৈয়াল ও মাতা মেহেরজান অনেক ধুমধামে কেদারপুরের সাহেবের চরে হাকিম খানের কাছে বিয়ে দেন রানু বেগমকে। কিন্তু পর পর তিনবার পদ্মার ভাঙনে সর্বস্বান্ত হয়ে যায় রানুর পরিবার।
জীবিকার তাগিদে দুই ছেলে ঢাকায় কাজ করে খান। তারা তার মায়ের কোনো খবরও নেন না। স্বামীও অন্য মহিলাকে বিয়ে করে চলে গেছে অজানা গন্তব্যে।
তাই বাধ্য হয়েই একা একা রাস্তার পাশে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন রানু বেগম।
রানু বেগম বলেন, পদ্মা নদীর ভাঙনের ফলে পরপর তিনবার আমাগো বাড়ি-ঘর জমিজমা সবকিছু শেষ হয়ে যায়। আমার স্বামী ও সন্তানরাও আমাকে ছেড়ে চলে যায়। কোনো উপায় না পেয়ে বাবার বাড়িতে আসছি। আমার ভাইয়রাও গরিব তাই তাদেরও থাকার মতো ঘর নাই। আমি কই থাকুম তাই বিলের পাশে কলাগাছের নিচে একটি ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে থাকি। আর এ রাস্তাতেই একটা চুলা বানায়া রান্না করে খাই। বৃষ্টি আইলে আর রানতে পারি না। রাইতে বৃষ্টি আইলে না ঘুমায়ে কাপড় মুড়ে বসে থাকি। গায়ের কাপড়, কাথা ও সবকিছু ভিজে যায়। বৃষ্টিতে ভিজি, পানিতে ভিজি, ভেজা মাটিতে আমার ঘর ভরে যায়।
সরকার যদি আমারে একটা ঘর বানায়া দিত তাইলে আমি থাকতে পারতাম। এ কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে ওঠেন রানু বেগম।