বান্দরবানের থানচি ও রুমায় দফায় দফায় ব্যাংকে হামলা, টাকা ও অস্ত্র লুট এবং ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণের ঘটনায় ৭টি মামলা হয়েছে। কিন্তু এ মামলায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর কোন নেতা ও সশস্ত্র সদস্যদের নাম উল্ল্যেখ করে আসামি করা হয়নি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও র্যাব ওই ঘটনায় কেএনএফ সম্পৃক্ততা পাওয়ার কথা বললেও এ ঘটনায় রুমায় ৪টি ও থানচিতে ৩টি মোট ৭টি মামলায় অজ্ঞাত নামা প্রায় ১৮০ জনকে আসামি করে মামলা হলেও মামলায় কেএনএফ সদস্যের নাম নেই। শুক্রবার (৫ এপ্রিল) রাত ১১ টা ৫৫ মিনিটে বান্দরবান জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে দেওয়া মামলা সংক্রান্ত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কুকি-চিন সদস্যের নাম না থাকার তথ্যটি জানা যায়।
বুধবার (৩ এপ্রিল) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বান্দরবানের রুমা-থানচিতে ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনায় কুকি চিন নামে একটি জঙ্গি সংগঠন জড়িত বলে জানা গেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হামলা, ব্যাংকের টাকা ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় রুমা থানায় গত ৫ এপ্রিল পুলিশ, আনসার, সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা ও মসজিদের ইমাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলের ১৩০-১৫০ জনকে আসামিকে করে বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ ও ২০০৯ সালের সন্ত্রাস বিরোধী আইনের বিভিন্ন ধারায় ৪টি মামলা দায়ের করে এবং সেই সঙ্গে থানচি থানায় অজ্ঞাতনামা ডাকাত দলের ২৫-৩০ জনকে আসামি সোনালী, কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা ও পুলিশ বাদী হয়ে বিভিন্ন ধারায় তিনটিসহ মোট ৭টি মামলা দায়ের করে এবং আরও একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন।
এই বিষয়ে থানচি থানার ওসি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, অজ্ঞাতদের আসামি করে থানচি থানায় ৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আরও একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে, আসামি ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
মামলায় বলা হয়, গত ২ এপ্রিল ৮ টা ১৫ মিনিটে রুমা থানার রুমা বাজারস্থ সোনালী ব্যাংকে শতাধিক অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ১৩০-১৫০ জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল সোনালী ব্যাংক এর উত্তর দিক (বেথেল পাড়া) হতে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে বিদ্যুৎ না থাকার সুযোগ নিয়ে অতর্কিত হামলা ও মারধর করে অস্ত্রের মুখে পুলিশ, আনসার ও অন্যান্য লোকজনদেরকে জিম্মি করে ফেলে। আক্রমণকালে সোনালী ব্যাংকের ডিউটিরত গার্ড কনস্টেবলসহ সর্বমোট ১০ জনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ২টি এসএমজি ও ৬০ রাউন্ড গুলি, ৮ টি চায়না রাইফেল ও ৩২০ রাউন্ড গুলি, আনসার সদস্যদের ৪ টি শর্টগান ও ৩৫ রাউন্ড কার্তুজ ও সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার মো. নিজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। হামলাকারী দলের সদস্যরা ওই রাত ৯ টা ১৫ মিনিটে হামলা শেষে লুটকৃত অস্ত্রগুলি ও ম্যানেজার মো. নেজাম উদ্দিনকেসহ ঘটনাস্থলের উত্তরে বেথেল পাড়ার দিকে চলে যায়।
বান্দরবান পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন জানান, আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
মামলায় আরও বলা হয়, গত ৩ এপ্রিল আনুমানিক ১২ টা ৪০ মিনিটে ২৫-৩০ জনের একটি সশস্ত্র সঙ্গবদ্ধ ডাকাত দল থানচি থানাধীন সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে হামলা চালায়। এসময় ১৫ হতে ২০ লক্ষ টাকা এবং কৃষি ব্যাংক থেকে আনুমানিক ৩ লক্ষ টাকাসহ ব্যাংকের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও উপস্থিত লোকজনদের কাছ থেকে আনুমানিক ১০ থেকে ১৫ টি মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে কয়েক রাউন্ড ফায়ার করে ত্রাস সৃষ্টি করে ঘটনাস্থল থেকে পশ্চিম দিকে শাহাজাহান পাড়ার পাহাড়ী এলাকার দিয়ে চলে যায়।
এদিকে শনিবার (৬ এপ্রিল) জেলার রুমার সোনালী ব্যাংক পরিদর্শন কালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আজ (শনিবার) থেকে ব্যাংকে ডাকাতি, অস্ত্রলুটের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যাবস্থা নেওয়া হবে এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হবে। এছাড়া এ ঘটনা ঘটার আগাম তথ্য দেওয়ার বিষয়ে গোয়েন্দাদের ব্যার্থতা থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।